ঢাকা: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক পক্ষ উপলক্ষে ‘নারী অধিকার: তরুণের ভাবনা’ বিষয়ে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে নারীদের কথা বলার চর্চা ও বোধের চর্চা জাগ্রত করে নারী অধিকারের চর্চা আরও বেগবান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ৫২ বছর কাজ করছে। নারীর অধিকার আদায়ে বিশ্বব্যাপী লড়াই চলছে। কেননা যুগ যুগ ধরে সভ্যতার বিকাশ হলেও অর্ধেক জনগোষ্ঠীর নারীকে অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা এখনো পিছিয়ে। দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী পুরুষের সমতা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আজকের পরিবারে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান, জীবনযাত্রা, অংশীদারিত্বের, সমতা-মর্যাদার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তা তরুণ প্রজন্ম কীভাবে দেখছে তা আলোচনার উদ্দেশ্যে আজকের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কেননা তরুণদের হাত ধরে আগামীর নারী আন্দোলনের অগ্রসর করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, নূতন প্রজন্মের কাছে তরুণ সমাজের ভাবনা নারী আন্দোলনকে পরিচিত করার লক্ষ্যেই আজকের এই সভা। একবিংশ শতাব্দীর প্রায় এক চতুর্থাংশ অতিক্রান্ত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, অনেক আইন হয়েছে। অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনও অনেক বাধা আছে। সমাজ সম্পর্কের নতুনভাবে অধঃস্তনতার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে তরুণদের সমতার দৃষ্টি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত তরুণদের মধ্যে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন শিক্ষার্থী। এছাড়া সাফ গেমসে সাঁতারে প্রথম স্বর্ণ বিজয়ী মাহফুজা খাতুন শিলা; গ্রিন ভয়েজ সংগঠনের মনসুরা তৃপ্তি; বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কন্টেন্ট রাইটার ফারজানা আফরোজ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সংগীতা আহমেদ; ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএর প্রতিনিধি সুমনা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় বক্তারা বলেন, নারী নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। নারী অধিকার নিয়ে আজও আন্দোলন করে যেতে হচ্ছে। যার সূচনা হয় বেগম রোকেয়ার হাত ধরে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাসহ সব পর্যায়ে নারীরা নিজ নিজ জায়গায় সফল হলেও নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন এখনো চলমান। পরিবারে বা সমাজে নারীর প্রতি আচরণ ভিন্ন রকম। সহিংসতার জন্য দোষারোপ করা হয় নারীকে। এখন নারীরা নেতৃত্ব পর্যায়ে কাজ করতে পারছেন। এটা আগামীর জন্য শুভবার্তা। তবে উল্টো পিঠ আছে। এমন যেন না হয় বাসায় অল্প বয়সী কাজের মেয়ে আছে। জাস্টিস, ইকুয়ালিটির জায়গা যেন সবাই বুঝতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো নারীরা বৈষম্যের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দ্বারা নারীদের অবদমিত করে রাখা হয়।
অন্যদিকে ১৫-১৬ বছর আগে খেলাধুলায় নারীদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। নানা সামাজিক ও পারিবারিক বাধা ছিল। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে নিজেদের প্রচেষ্টার কারণে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণে। তবে অভ্যন্তরীণ পরিবেশে নারী খেলোয়াড়রা নানা হয়রানির শিকার হয়।
তারা বলেন, নারীকে এখন অনলাইনে ইউটিউব, সোশাল মিডিয়া, প্ল্যাটফর্মে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। নারীর নিজেকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। গণমাধ্যমে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এসব জায়গায় নারী সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হতে হবে; প্রত্যেক মেয়েকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে; নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে; প্রত্যেক তরুণকে নিজ নিজ জায়গা থেকে নারীর প্রতি অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। পুরুষদেরও মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তান পালনের পাশাপাশি নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে; নারী জন্মগতভাবেই অধিকার নিয়ে এসেছে, সেই অধিকার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যোগ্যতা নিয়ে তৈরি করতে হবে। নারী অধিকার হিসেবে প্রতিবাদ করতে যেয়ে গণবিচ্ছিন্নতা হওয়া যাবে না। নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। নারীদের কথা বলার চর্চা ও বোধের চর্চা জাগ্রত করতে হবে। নারী অধিকারের চর্চা পরিবারেও করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২২
এইচএমএস/এএটি